একবিংশ শতাব্দিতে এসে আমরা যখন জ্ঞান-বিজ্ঞানের সর্বোচ্চ শাখায় আরোহন করছিলাম,মহাকাশে পাড়ি দিচ্ছিলাম,বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হচ্ছিল ঠিক তখন প্রকৃতি তার রূপ পাল্টায় সমস্ত পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে করোনা মহামারী।অচল হয়ে পড়ে সমস্ত পৃথিবী,যার প্রভাব পড়ে প্রতিটি খাতে বিশেষ করে শিক্ষাখাতে,যার জন্য শিক্ষার্থীরা অনেকটাই পিছিয়ে পড়ে।
দীর্ঘ সাত মাস যাবৎ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে যার ফলে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না যার জন্য সরকার এবং শিক্ষার্থীরা উদ্বিগ্ন,যদিও অন্য সবকিছু এখন পুরোপুরি ভাবে স্বাভাবিক এবং মাদ্রাসা গুলোও খোলে দেওয়া হয়েছে। স্রষ্টার অশেষ মেহেরবানীতে আমাদের আক্রান্তের সংখ্যা কমতেছে দিন দিন। তাই অনেক শিক্ষার্থীরা মনে করছে যে এখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়া উচিত।
এরই প্রেক্ষিতে সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে এ বিষয়ে তাদের মতামত এবং বর্তমানে তাদের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাই ।
এ সময় আইন বিভগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমন আহমেদ বলেন “শিক্ষার্থীদের অবস্তা বুঝতে হলে প্রথমে আমাদের বুঝতে হবে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত শুধু আমাদের বাংলাদেশ হয় নি পুরো বিশ্ব সংক্রমিত হয়েছে,যার ফলে আমরা শিক্ষার্থীরা কিছুটা হলেও পিছিয়ে পড়েছি তা সবাইকে মেনে নিতেই হবে,কারণ দীর্ঘদিন থেকে আমরা বিদ্যালয়ের সরাসরি ক্লাস থেকে বঞ্চিত আর এজন্য আমরা আমাদের পাঠ্যবইয়ের অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পুরোপুরি বুঝতে সক্ষম নয় যদিও অনলাইনে নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে তারপর ও বাস্তব জীবনের সাথে ভার্চুয়াল জীবনের তো কিছু পার্থক্য থাকবেই,আর এই পার্থক্যটাই আমাদের পিছিয়ে রেখেছে।আল্লাহর রহমতে এখন আমাদের দেশে পরিবহণ থেকে শুরু করে সব কিছুই পূর্বের মতোই চলছে,করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হার ও দিন দিন কমতেছে যা আমাদের দেশের সব ধরনের মানুষের জন্য সুখকর। তাই আমি মনে করি এই মূহুর্তে সামাজিক নিরাপত্তা ও দূরত্ব বজায় রেখে দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় গুলো খোলে দেওয়া উচিত কারণ বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ এখানে যারা শিক্ষা গ্রহণ করে এবং শিক্ষাদান করেন সবাই দেশের সচেতন নাগরিক”।
এ সময় একই বর্ষের আরেকজন শিক্ষার্থী তাহমিনা আক্তার মুন্নি বলেন ” আজ প্রায় সাত মাস থেকে ইউনিভার্সিটি বন্ধ শুধু ইউনিভার্সিটি নয় দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ।বর্তমানে অফিস, আদালত গণপরিবহণ সহ সব কিছু খোলা আছে। সবকিছু স্বাভাবিক আছে তাহলে ইউনিভার্সিটি কেন খুলে দেওয়া হচ্ছে না? করোনা ভাইরাস কী শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থাকে? সেই সাথে প্রাইমারী স্কুল খুলে দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে আমার মনে হচ্ছে প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষার্থীরা এখনো ছোট। তারা সামাজিক দুরত্ব কী? কিভাবে করোনা ছড়ায় তা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা নেই।কিন্তু ইউনিভার্সিটি এর শিক্ষার্থীরা যথেষ্ট ম্যাচিউর তারা করোনার বিস্তার সম্পর্কে অনেক ধারনা আছে এবং তারা প্রাইমারী শিক্ষার্থী থেকে অনেক সচেতন।তাই প্রাইমারী স্কুলের আগে ইউনিভার্সিটি খুলে দেওয়াই উত্তম হবে”।
এ বিষয়ে আরও কথা বলেন আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিব উদ্দিন রাসেল, তিনি বলেন “Covid-19 একটি বিশ্ব মহামারী এটা আমাদের সকলেরই জানা। এই মরণঘাতি ভাইরাস পুরো বিশ্বের অর্থনীতি ও জীবনযাত্রাই বদলে দিয়েছে।দীর্ঘ ৭ মাস যাবত বাংলাদেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে এ ভাইরাস প্রতিরোধ করার জন্য। যে কারণে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এক সময় আক্রান্তের হার অনেক ছিলো আমাদের এখানে কিন্তু এখন এর পরিমান অনেকটা কমে আসছে দিন দিন। তাই এখন সাস্থবিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান( অন্ততো বিশ্ববিদ্যালয়) গুলো খুলে দেয়া উচিত,এবং এটা আমাদের দাবী সংশ্লিষ্টদের কাছে।
কারণ ধীরে ধীরে সকল সেক্টরে অফিস-আদালত,হাট বাজার খুলে দেয়া হয়েছে, আমাদের বাবা-চাচারা অফিসে যেতে পারছেন ব্যবসায় যেতে পারছেন যেখানে বয়স্কদের আক্রন্ত ঝুঁকিটা একটু বেশীই। সেখানে আমরা তরুণরা ঘরে বসে থাকার কোন কারণ দেখছি না আমি !
একটা মহামারি আসলে দুদিন পরেই চলে যাবে না আমাদের সকলের সচেতনতাই পারে এর প্রতিরোধ করতে”। এবং তিনি সাস্থবিধি মেনে বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠাণ খুলার জোর দাবী জানান।
এ ছাড়াও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী এবং রোটারেক্ট ক্লাব অফ সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এর সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ জাকির আহমদ বলেন ” বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধের ফলে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অনেকে অনলাইনে ক্লাসে যেমন ঠিক মত ক্লাসে মনযোগ দিচ্ছে না তেমনি, পরীক্ষা গুলা ফিজিক্যাল এর চাইতে অনেকে নিম্ন মানে নিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তাতে করে যেমন আসল মেধা যাচাই হচ্ছে না, তেমনি দেশ ও জাতি এক নিরক্ষরতার দিকে এগুচ্ছে। অনলাইন শিক্ষা ব্যাবস্থা একদিকে যেমন সুফল অন্যদিকে শারীরিকভাবে কুফলে পরিণত হয়েছে। যদি সব কিছু স্বাভাবিক ভাবে চলতে পারে স্কুল কলেজ কেন চলতে পারবে না।আমার মতে বাংলাদেশের মত একটা জায়গায় এই ধরনের চিন্তা সত্যিই বাহুল্য।মনে রাখা উচিত আপনারা যেসব ছাত্রদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে ঘরে থাকার আহবান করছেন সেই তারাই বিকেল বেলা রেস্টুরেন্টে পার্টি করে বেড়াচ্ছে। একধরনের নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মত”।এবং তিনি সাধারণ ছাত্রদের পক্ষ থেকে অবিলম্বে ক্যাম্পাস খুলে দেওয়ার জোর দাবি জানান।
আশা করি সরকার শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিয়ে অতিশিগ্রই সমস্ত ক্যাম্পাস খোলেদিবে এবং শিক্ষার্থী তাদের স্বাভাবিক শিক্ষা জীববে ফিরে যাবে।
প্রতিবেদকঃশাহান মাহমুদ অনিক