কৃষিতে বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষণীয়। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ও ক্রমহ্রাসমান কৃষিজমি এবংবন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী প্রকৃতি সত্ত্বেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উদাহরণ। ১৯৭২-৭৩ সালের তুলনায় কৃষিতে বাংলাদেশের উৎপাদন চার গুণ বেড়েছে।
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের ধানের উৎপাদন তিন গুণেরও বেশি, গম দ্বিগুণ, সবজি পাঁচ গুণ এবং ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে দশ গুণ। দুই যুগ আগেও দেশের অর্ধেক এলাকায় একটি ও বাকি এলাকায় দুটি ফসল হতো। বর্তমানে দেশে বছরে গড়ে দুটি ফসল হচ্ছে। সরকারের যুগোপোযোগী পরিকল্পনা, পরিশ্রমী কৃষক এবং মেধাবী কৃষি বিজ্ঞানী ও সম্প্রসারণবিদদের যৌথ প্রয়াসেই এ সাফল্য।
স্বাধীনতার পর দেশে প্রতি হেক্টর জমিতে দুই টন চাল উৎপাদিত হতো। এখন হেক্টর প্রতি উৎপাদন হচ্ছে চার টনেরও বেশি। ধান ধরে হিসাব করলে তা ৬ টন। তাছাড়া হেক্টরপ্রতি ভুট্টা উৎপাদন হয় বিশ্বে গড়ে ৫ দশমিক ১২ টন। বাংলাদেশে এ হার ৬ দশমিক ৯৮ টন। খাদ্যশস্যে প্রতি হেক্টরে ১০ দশমিক ৩৪ টন উৎপাদন করে বাংলাদেশের ওপরে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের পরে রয়েছে আর্জেন্টিনা, চীন ও ব্রাজিল।
সবজি উৎপাদনে তৃতীয় আর চাল ও মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে চতুর্থ অবস্থানে। মাছ রফতানি বেড়েছে ১৩৫ গুণ। এফএও ( Food and Agriculture Organization) পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০২২ সাল নাগাদ বিশ্বের যে চারটি দেশ মাছ চাষে বিপুল সাফল্য অর্জন করবে, তার মধ্যে প্রথম দেশটি হচ্ছে বাংলাদেশ। এরপর থাইল্যান্ড, ভারত ও চীন। বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও দুর্যোগ সহিষ্ণু শস্যের জাত উদ্ভাবনেও শীর্ষে বাংলাদেশের নাম।
ব্লাক বেঙ্গল ছাগল উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ বাংলাদেশ। আর ছাগলের মাংস উৎপাদনে পঞ্চম। বাংলাদেশের ব্লাক বেঙ্গল জাতের ছাগল বিশ্বের সেরা জাত হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
বর্তমান সরকারের পরপর দুই মেয়াদে চার দফায় সারের দাম কমানো হয়। ১০ টাকার বিনিময়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়, সেচের পানির ভর্তুকির টাকা সরাসরি কৃষকের একাউন্টে ট্রান্সফার করা হয় এবং সেই সঙ্গে ১ কোটি ৮২ লাখ কৃষকের মাঝে উপকরণ সহায়তা কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। যুগান্তকারী এসব পদক্ষেপের ফলে কৃষিতে এসেছে ঈর্ষণীয় সাফল্য।
সরকার কৃষকদের সম্ভাব্য সব রকম উপকরণ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সরকারের প্রবর্তিত কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড দেশে ও বিদেশে বিপুলভাবে প্রশংসিত হয়েছে। বাংলাদেশের অনুসরণে ভারত সরকার কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে। দেশের ৩৫টি জেলায় ২৫ শতাংশ ভর্তুকিতে ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার, হারভেস্টরসহ বিভিন্ন কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহের ব্যবস্থা করেছে। কৃষি পুনর্বাসন কার্যক্রমের আওতায় বিনামূল্যে সার ও বীজ সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে। আউশে প্রণোদনা প্যাকেজও অব্যাহত আছে।। আম উৎপাদনে বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য স্থানে। আর আলু উৎপাদনকারী শীর্ষ দশ দেশের কাতারে এসেছে দেশ। বাংলাদেশ থেকে আলু, সবজি আর আম রফতানি হচ্ছে বিদেশে। একই জমিতে বছরে একাধিক ফসল চাষের দিক থেকেও বাংলাদেশ এখন বিশ্বের জন্য উদাহরণ। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করায় বাংলাদেশের সাফল্যকে বিশ্বের জন্য উদাহরণ হিসেবে প্রচার করছে। সরকারের ডিমওয়ালা ইলিশ সংরক্ষণ এবং জাটকা নিধন নিষিদ্ধকরণের নীতিমালা বাস্তবায়নের ফলে এখন ইলিশের উৎপাদন বহুল পরিমাণে বেড়েছে। চিংড়ি রফতানি থেকে প্রতি বছর আমাদের আয় ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া পুষ্টির অন্যান্য উৎপাদন ডিম, দুধ ও মাংসের উৎপাদনও বহুল পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাতে বৃদ্ধি পেয়েছে এসব পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্যের জনপ্রতি প্রাপ্যতা।
আজ আমাদের কৃষি সাফল্যের পাশাপাশি কিছু নেতিবাচক দিকও আছে। তা হচ্ছে, আমাদের কৃষকরা বছরের পর বছর তাদের বহু কষ্টে উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। কোনো ভাবে নিশ্চিত করা যাচ্ছে না কৃষি পণ্যের সঠিক মূল্য।
খন্দকার সুমাইয়া লামিসা হক স্রোতস্বিনী
সেশন : ২০১৭-১৮
বিভাগ : আইন ও ভূমি প্রশাসন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়