আহম্মেদ কাওসার (ইবু), পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ কলাপাড়া উপজেলার কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্রের আবাসিক হোটেলে এক স্কুল শিক্ষাথর্ী গণধর্ষণের ঘটনায় জিসান ওরফে সোহেল (১৮) ও ভাড়াটিয়া মোটরসাইকেল চালক সাগরকে (২১) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেলে আমতলী থানা পুলিশ জিসান ওরফে সোহেলকে কলাপাড়া উপজেলার চাকামইয়া ইউনিয়ন থেকে এবং সাগরকে আমতলী পৌর এলাকার চৌরাস্তা থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। গ্রেপ্তারকৃত জিসান ও সাগরকে বুধবার সকালে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।ধর্ষনের ঘটনায় ওই শিক্ষার্থীর মা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আমতলী থানায় মঙ্গলবার দুপুরে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই শিক্ষাথর্ী আমতলী পৌরসভার মফিজ উদ্দিন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। মোবাইলফোনে বন্ধুত্ব করতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয় ওই শিক্ষাথর্ী। গ্রেপ্তার হওয়া জিসান ওরফে সোহেল মহিপুর ইউনিয়নের সেরাজপুর গ্রামের বাদশা গাজীর পুত্র এবং ভাড়াটে মোটরসাইকেল চালক। সাগর আমতলী পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের সানু হাওলাদারের ছেলে।
আমতলী থানার পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর ইউনিয়নের সেরাজপুর গ্রামের বাদশা গাজীর পুত্র জিসান ওরফে সোহেলের সাথে মোবাইলফোনে কথাবলার মাধ্যমে ওই শিক্ষাথর্ীর বন্ধুত্ব হয়। এক পর্যায়ে জিসান ওই শিক্ষাথর্ীর সাথে দেখা করার প্রস্তাব দেয়। গত সোমবার শেষ বিকেলে জিসান দেখা করতে আমতলী পৌর এলাকায় ওই শিক্ষাথর্ীর বাসার সামনে যায়। এরপর ওই শিক্ষাথর্ীর মোবাইলফোনে কল করলে সে বাসা থেকে বের হয়ে জিসানের সাথে দেখা করে। এ সময় জিসান তাঁকে নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর কথা বলে একটি অটো রিক্সায় তুলে আমতলী সদর ইউনিয়নের খুড়িয়ার খেয়াঘাটের দিকে নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকেই প্রস্তুত রাখা ছিল একটি ভাড়াটে মোটরসাইকেল।
এরপর ওই শিক্ষাথর্ীকে মোটরসাইকেলে তুলে কুয়াকাটায় নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর ওই দিন রাত ৮ টার সময় কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্রের হোটেল রাজু নামে একটি আবাসিক হোটেলে তাঁরা ওঠে। সেখানে জিসান ওরফে সোহেল ও সাগরসহ পাঁচজনে মিলে গণধর্ষন করে ওই স্কুল শিক্ষাথর্ীকে। এরপর হোটেল রাজু থেকে শিক্ষাথর্ীকে নিয়ে ওঠানো হয় সাগর নীড় নামে অপর একটি আবাসিক হোটেলে। হোটেলটির নীচ তলার দু’টি কক্ষ ভাড়া নিয়ে রাতভর পঁাচ যুবক মিলে ধর্ষণ করে স্কুল শিক্ষাথর্ীকে।
মঙ্গলবার সকালে ধর্ষণকারীরা ওই স্কুল শিক্ষাথর্ীকে একটি পরিবহনে তুলে আমতলী পাঠিয়ে দেয়। সে বাড়িতে গিয়ে মায়ের কাছে পুরো ঘটনা জানায়। মঙ্গলবার দুপুরে শিক্ষাথর্ীর মা আমতলী থানায় ৩ জনকে আসামী করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। মামলায় ২ জনের নাম উল্লেখ করে একজনকে অঞ্জাত দেখানো হয়।
আমতলী থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘ধর্ষিত শিক্ষাথর্ীর মা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আমতলী থানায় মামলা দায়ের করেন। প্রাথমিক তদন্তে ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। আমরা দুই ধর্ষককে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। বাকী আসামীদেরকেও চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করতে পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ধর্ষিত হওয়া শিক্ষাথর্ীর ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, সাগর নীড় আবাসিক হোটেলের রেজিষ্টারে সঠিকভাবে নাম লিপিবদ্ধ করা হয়নি। তা ছাড়া দুটি কক্ষ নিয়ে ধর্ষণকারীরা ছয় জন অবস্থান করলেও রেজিষ্টারে মাত্র একজনের নাম লেখা হয়। হোটেলটির রেজিষ্টারও জব্দ করা হয়েছে।’