ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :
ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের বাদশা মিয়া চাকরির সুবাদে ঢাকায় থাকার সুযোগ নিয়ে দীর্ঘ ৪/৫ বছর ধরে স্ত্রী জেসমিন আক্তার (২৮) একই পাড়ায় আকুল মন্ডলের সাথে চুঁটিয়ে প্রেম করে যাচ্ছিলেন। এর আগে প্রতিবেশিদের হাতে দুই একবার ধরাও পড়ে। বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা বলে আকুলের সাথে দেখা করতেন স্ত্রী জেসমিন।
এছাড়াও স্বামীর দেওয়া মোবাইলে প্রেমিকার সাথে কথা বলতে সমস্যা হতে পারে ভেবে একটি নতুন মোবাইলও কিনে দিয়েছিলেন বলে প্রতিবেশিদের হাতে এবার ধরা পড়ে স্বীকার করেছেন প্রেমিক আকুল মন্ডল।
বিষয়টি শুরু থেকেই স্বামী বাদশা মিয়া জানতে পেরে দুটি শিশু বাচ্চার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে স্ত্রীকে অসামাজিক কার্যকলাপ থেকে ফিরে আসার জন্য অনেকবার বুঝিয়েছেন। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে গত সোমবার (২৩ আগস্ট) রাত ১১টার দিকে আবারও প্রেমিক আকুল মন্ডল তার বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় বাদশার ভাই ছেলের হাতে ধরা পড়ার খবর পেয়ে এবং স্ত্রীর কারনে বারবার মান সম্মান ক্ষুণ্ণ হওয়ার কারনে সেই রাতেই ঢাকা থেকে বাড়িতে এসে স্ত্রীকে তালাক এবং স্ত্রীর প্রেমিক আকুল মণ্ডলকে পুলিশে দিয়েছে স্বামী বাদশা মিয়া।
বাদশা মিয়া চাঁদপুর ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের মোঃ জলিল সেখে’র ছেলে ও স্ত্রী জেসমিন সদর উপজেলার হলিধানি ইউনিয়নের প্রতাপপুর গ্রামের বাক্কার মেয়ে এবং স্ত্রীর প্রেমিক আকুল মন্ডল চাঁদপুর ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের শহিদুল মন্ডলের ছেলে বলে জানা গেছে।
ঘটনার বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী বাদশা মিয়ার ভাতিজা সাজেদুল বলেন, সে গত রাত আনুমানিক ১১টার দিকে বাড়ির পাশে রাস্তার উপর বসে মোবাইলে ফেসবুক চালাচ্ছিলেন। হঠাৎ ঐ বাড়ির গেট খোলার শব্দ পেয়ে সে লাইট মারলে একজন পুরুষ মানুষ দেখতে পায়। তার মনে সন্দেহ হওয়ায় প্রতিবেশী আরেক জনকে ডেকে নিয়ে বাড়ীর মধ্যে ঢুকে চারিদিকে লাইট মেরে গোয়াল ঘরের পাশে বস্তা দিয়ে লুকিয়ে থাকা একজনকে দেখতে পায়।
সেখানে এগিয়ে গিয়ে দেখে পাড়ার আকুল মন্ডল বসে আছে। পূর্বেও তার চাচির সাথে একই ব্যক্তির ক্যালেংকারির ঘটনা থাকায় তার বুঝতে আর অসুবিধা হয়নি যে কেনো সে এ বাড়িতে ঢুকেছিল। এরপর তাকে ধরে পার্শ্ববর্তী ভাই ও চাচাদের খবর দেয়। সারারাত তাকে আটক রেখে বিভিন্ন জাগায় বিষয়টি ফোনের মাধ্যমে জানায় বলে সাজেদুল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
এ ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তাদের ৭ বছরের মেয়ে কেঁদে কেঁদে বলেন, আকুলের সাথে তার মা নানা বাড়িতে যেয়ে দেখা করতো। হলিধানি বাজার থেকে তার মাকে আকুল মন্ডল কথা বলার জন্য একটি মোবাইলও কিনে দিয়েছে। শিশুটি আরও বলেন, আকুলের সাথে তার মা বিয়ে করবে এই কথা যদি সে কাউকে বলে দেয় তাহলে তার মা তাকে বিষ অথবা বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলবে বলে তার মা জানিয়েছে । শিশুটি সাংবাদিকদের সামনে এমন লোম হর্ষক বর্ণনা দেওয়ার সময় অনেক অশ্র সিক্ত দেখা গেছে।
ঘটনা সম্পর্কে স্বামী বাদশা মিয়া বলেন, সে দীর্ঘ ১০/১৫ বছর হলো চাকরির সুবাদে ঢাকা থাকেন। প্রতি দুই মাস পর পর সে বাড়িতে আসে স্ত্রী সন্তানদের দেখতে। কিন্তু বর্তমান করোনার কারনে একটু কম আসা হয়েছে। তিনি বলেন, অতি কষ্টের মধ্যে থেকেও সংসারে কোন অভাব আমি বুঝতে দেইনি। বাড়ি থেকে যখনি টাকার কথা বলেছে বেতন না পেলেও কারো কাছ থেকে জোগাড় করে দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, স্ত্রীকে বলেছিলাম আর কয়েকটা দিন কষ্ট করে থাক কিছু টাকা জোগাড় করে বাড়িতে এসে একটি ইজিবাইক কিনে চালাবো। বাদশা মিয়া বলেন, এতো বোঝানোর পরেও যখন হলনা তাছাড়া ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই আমি ওর সাথে সংসারটা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু ও যখন পরিবর্তন হলইনা এবং এই অবৈধ সম্পর্কের মধ্যে সন্তানদের জীবনের ঝুঁকি চলে এসেছে সে ক্ষেত্রে তাকে ডিভোর্স দেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিলনা।
পরিদর্শনে আশা চাঁদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বলেন, আমি সকালে সংবাদ পেয়ে এসেছি এবং তাদের মাঝে দুটি সন্তানের কথা বিবেচনা করে সামাজিক ভাবে বসে মেটানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু মেটানো সম্ভব হয়নি। চেয়ারম্যান বলেন,সে আসার পূর্বেই কাজী ডেকে তারা ডিভোর্স করে ফেলেছেন।
বিষয়টির ব্যাপারে বাদশা মিয়ার স্ত্রী জেসমিন ও শ্বশুর বাক্কা মিয়া অস্বীকার করে বলেন, তার মেয়েকে জোর পূর্বক ডিভোর্স দেওয়া হয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে পার্শ্ববর্তি চরপাড়া ক্যাম্পের আইসি আমিরুল ইসলাম বলেন,আকুল মন্ডল নামে একজনকে বাদশা মিয়ার বাড়িতে আটক করেছে এমন সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে যেয়ে তাকে নিয়ে এসে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে।
তার বিরুদ্ধে এখনও কেউ অভিযোগ করেনি।তিনি বলেন, অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।